Monday, April 29, 2024

সামাজীক বিজ্ঞান ইউনিট ৩!! ১৮ তম NTRCA স্কুল পর্যায় লিখিত প্রস্তুতি।

 

সমাজবিজ্ঞান বা সমাজবিদ্যা বা সমাজতত্ত্ব মানুষের সমাজ বা দলের বৈজ্ঞানিক আলোচনা শাস্ত্র এতে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনের সামাজিক দিক এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয় সমাজ বিষয়ক গবেষণা অতীত কাল থেকেই প্রচলিত ছিল তবে অগাস্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম ১৮৩৮ সালে এর রীতিবদ্ধ আলোচনা করেনTable of Contents

o    সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি বিকাশ

সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে ?

যে সমাজবিজ্ঞান পূর্ণাঙ্গ সমাজজীবন পর্যালোচনা করে তাকে এককথায় ব্যাখ্যা করাও সম্ভব নয়। তাই আমরা সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যেও সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ দেখতে পাই।

|

মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা এবং মানুষের পারস্পরিক সম্বন্ধহেতু মানবজীবনে তথা সমাজে যা কিছু ঘটে, এর সামগ্রিক আলোচনা সমাজবিজ্ঞানের অন্ত র্ভুক্ত সমাজের প্রকৃতি এবং সমাজজীবনের বৃহত্তর দিক তথা পরিবার, রাজ্য, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, অর্থনৈতিক অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির গির্জার মধ্যে কিভাবে সামাজিক জীবন নিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত বিকশিত হয়ে উঠে সমাজবিজ্ঞান তা আলোচনা করে থাকে কাজেই সমাজজীবনের আলোচনায় মানুষের উদ্দেশ্য, আদর্শ, আশা-আকাঙ্ক্ষার আলোচনা অবাস্তব নয় সমাজের জন্য এবং সমাজের উন্নতিকল্পে সামাজিক মানুষের সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অত্যধিক যে কোন সমাজেই সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম বিশেষ করে অনুন্নত দেশে সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্ব বিশেষভাবে উপলব্ধি করা যায় আমাদের দেশে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান প্রতিটি মানুষের থাকা একান্ত প্রয়োজন সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান মানে সামাজিক ধারণার সম্প্রসারণ আপন সমাজ ব্যক্তি চরিত্রের আলোকসম্পাত করতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে

সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তাঃ মানুষের প্রয়োজনেই সমাজের উদ্ভব। আর সমাজের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণের জন্য সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি। সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
১। মানব সভ্যতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আমরা মানব সভ্যতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি।আদিম যুগে মানুষ কিভাবে বসবাস করত তাদের জীবনযাত্রা কেমন ছিলো তাদের আচার আচরণ, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার অন্যতম উৎস হলো সমাজবিজ্ঞান (sociology)
২। মানুষ সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজের মানুষ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সমাজে বসবাসরত মানুষের চরিত্র, চাল-চলন, আচার-আচরণ রীতিনীতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সমাজবিজ্ঞান মানুষের জীবন প্রণালি সম্পর্কে আলোচনা গবেষণা করে থাকে।
৩। সমাজ সম্পর্কে ধারণাঃ সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য অন্যতম মাধ্যম হলো সমাজবিজ্ঞান পাঠ। সমাজের গঠন কাঠামো, শ্রেণিবিভাগ, পারস্পরিক সম্পর্ক, রীতিনীতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৪। সমাজকাঠামো সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ সমাজকাঠামো সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে সমাজবিজ্ঞান সহায়তা করে। সমাজকাঠামো হলো সমাজবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় একটি প্রত্যয়। সমাজকাঠামোর পরিবর্তন বিকাশ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। 
৫। দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনঃ সমাজে বসবাসরত প্রত্যেক ব্যক্তির কিছু না কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। এসব দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেয় সমাজবিজ্ঞান। তাই কেউ সমাজে চলতে গেলে এসব দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হয়। সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে এসব দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে আমরা জানতে পারি তাই সমাজবিজ্ঞান পাঠ করা প্রয়োজন।
৬। সমাজের শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে ধারণাঃ সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির লোক বসবাস করে ।কেই উচ্চবিত্ত,কেউ নিম্নবিত্ত এছাড়া মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান বৌদ্ধ সকল ধর্মের মানুষ সমাজে বসবাস করে থাকে। সমাজে বিদ্যমান এসকল শ্রেণির শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে জানতে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৭। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ণঃ যে কোন সমাজের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কারণ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ছাড়া কোন সমাজ উন্নতি করতে পারেনা। আর এসব অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মানুষের কতটা বুপকার বয়ে আনবে সে বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়। কিভাবে পরিকল্পনা করলে উন্নতি সম্ভব এসব সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।
৮। সামাজিক পরিকল্পনার জন্য সামাজবিজ্ঞানের জ্ঞানঃ সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে জানা তার সমাধান করার উপায় সমুহ জানার জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৯। সামাজিক অপরাধ সম্পর্কে ধারণাঃ সমাজে বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত হয়। এসব অপরাধ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ অপরাধ দূরীকরণের ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজন সমাজে বিদ্যমান এসব অপরাধ প্রবণতা কমানোর জন্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অত্যাবশ্যকীয়।
১০। মানব সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানঃ মানব সংস্কৃতির উন্নতি বিকাশ সাধনে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অত্যাবশ্যকীয় বর্তমান সমাজবিজ্ঞানের কারণে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি একে অপরের সাথে সংমিশ্রণ হচ্ছে। এসকল বিষয় জানতে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
১১। সামাজিক উন্নয়নে সমাজবিজ্ঞানঃ সামাজিক উন্নয়নে সমাজবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।সমাজকে উন্নতর করতে হলে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান প্রয়োজন। কিভাবে পরিকল্পনা করলে সমাজে উন্নতি সম্ভব তা আমরা সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে জানতে পারি।
১২। সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বঃ সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে  সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা সম্ভব। মানব সমাজে মানবগোষ্ঠীর বিভিন্ন উন্নয়ন স্বার্থসিদ্ধির জন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহের গুরুত্ব অপরিসীম।
১৩। বিভিন্ন দেশের সমাজ সম্পর্কে জানাঃ সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন দেশের সমাজের সার্বিক চলচিত্র সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি। বাইরের দেশের মানুষের সম্পর্ক, মূল্যবোধ ঠিক কেমন সে সম্পর্কে ধারণা দেয় সমাজবিজ্ঞান।
১৪। সামাজিক পরিবর্তন সম্পর্কে জানাঃ সমাজবিজ্ঞান পাঠে সমাজবিজ্ঞানের সার্বিক পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারি। তাই সকলের জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক জীব হিসেবে সমাজে সুষ্ঠুভাবে বসবাস করতে হলে সামাজিক জ্ঞান প্রয়োজন।সমাজের কাঠামো, মানুষের জীবনধারা সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজন। তাই আমরা বলতে পারি সমাজ সমাজের মানুষের সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

 

কার্ল মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা কর

কার্ল মার্কস একজন বস্তুবাদী দার্শনিক। ঐতিহাসিক বস্তুবাদ মার্কসের অন্যতম একটি দর্শন। সমাজের দার্শনিক ব্যাখ্যায় মার্কসবাদ যে বিপ্লব ঘটিয়েছিল ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ছিলো তার ভিত্তি। এটি সমাজ ইতিহাসের বস্তুবাদ জড়বাদকে ব্যাখ্যা করে

ঐতিহাসিক বস্তুবাদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্ট্যালিন বলেছেন, সমাজ জীবনের ইতিহাস চরিত্র বিশ্লেষণের জন্য বস্তুবাদের নীতিগুলোর প্রয়োগ করাকেই ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বলে।

Howard Selsam বলেছেন, দ্বন্দমূলক বস্তুবাদের নীতিসমূহ যেমনি ঐতিহাসিক বস্তুবাদের তাত্ত্বিক ভিত্তি গঠন করে, ঐতিহাসিক বস্তুবাদও তেমনি দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের উদ্ভব বিষয়বস্তুর সামাজিক ঐতিহাসিক ভিত্তি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে।

Table of Contents

·         কার্ল মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্ব

o     

§  . উৎপাদনের দুটি দিক

§  . সামাজিক রাজনৈতিক জীবন ব্যবস্থার গতি প্রকৃতি

§  . উৎপাদন ব্যবস্থা শ্রেণী বৈষম্য সৃষ্টি করে

§  . দাস সমাজ

o    ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ব্যাখ্যা

কার্ল মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্ব

দার্শনিক কার্ল মার্কস বলেন, ইতিহাসের গতিপথ অর্থনৈতিক উপাদানের দ্বারাই পরিবর্তিত হয়। নিম্নে মার্কসের বস্তুবাদ তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

. উৎপাদনের দুটি দিক

ঐতিহাসিক বস্তুবাদ অনুযায়ী, উৎপাদনের দুটি দিক রয়েছে। একটি হল উৎপাদন শীক্ত, শ্রমিক তার শ্রম ক্ষমতা, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি উৎপাদন শক্তি এবং দ্বিতীয়টি হল উৎপাদন সম্পর্ক। এটি হল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মানুষে মানুষে তথা শ্রেণীতে শ্রেণীতে উৎপাদনভিত্তিক পারস্পরিক সংযোগ বা সম্পর্ক

. সামাজিক রাজনৈতিক জীবন ব্যবস্থার গতি প্রকৃতি

মার্কসের মতে, উৎপাদনের উপাদানগুলো যখন যে শ্রেণীর হাতে থাকে, তখন সে শ্রেণী সমাজে প্রাধান্য লাভ করে এবং সেভাবে সামাজিক রাজনৈতিক জীবনের গতি প্রকৃতি নির্ধারিত হয়।

. উৎপাদন ব্যবস্থা শ্রেণী বৈষম্য সৃষ্টি করে

উৎপাদন ব্যবস্থা সমাজকে পুঁজিপতি প্রলেতারিয়েত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করে। ফলে শ্রেণীসংগ্রাম শুরু হয়। অবশেষে শ্রেণীসংগ্রামের অবসান ঘটে এবং শ্রেণীহীন সমাজ গড়ে উঠে

. দাস সমাজ

দাস যুগে আদিম সমাজব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত উৎপাদন শক্তিসমূহ অধিকতর উন্নত হয়। দাসদের নির্মমভাবে শোষণ করা হতো। তারা ছিল সকল প্রকার অধিকার থেকে বঞ্চিত। সমাজে দাস মালিকরাই ছিল উৎপাদনের উপকরণ এবং দাসদের মালিক। পরবর্তী সময়ে উৎপাদন শক্তি উৎপাদন সম্পর্কে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং দাসদের বিদ্রোহের ফলে দাস সমাজ ভেঙে গড়ে উঠে সামন্ত সমাজ

ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ব্যাখ্যা

মার্কসীয় বস্তুবাদের মূলকথা হল বস্তুই মৌল এবং মন সচেতনতা গৌণ। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড অনন্ত, সময় বিস্তৃতিতেও তা অনন্ত। অতএব, সচেতনতা গড়ে উঠেছে বস্তুর ভিত্তিতে। এখানে অতীন্দ্রিয় কোন সত্তার সাহায্যে বস্তুজগৎকে ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়েছে। উপরন্তু বস্তুজগতের অস্তিত্ব সমাজের মানুষের উপর নির্ভরশীল নয়। অর্থাৎ, বস্তুজগৎ সমাজের উর্ধ্বে কিন্তু সমাজ বস্তুজগতের উর্ধ্বে নয়, বরং সামাজিক চিন্তাচেতনা বস্তুজগৎ নিঃসৃত

মার্কসীয় মতে বস্তুই প্রাথমিক চেতনা পরবর্তী সময়ের। ভাববাদীদের বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে মার্কস বলেছেন, চিন্তা কল্পনাপ্রসূত নয় বা আকাশ থেকে আসে না। অভিজ্ঞতার আলোকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যভাবেই চিন্তার প্রতিফলন ঘটে। 

সমাজ নিজেই একটি বস্তু। সমাজের বাস্তব অবস্থা থেকে সামাজিক চেতনার সৃষ্টি। সামাজিক চেতনা চিন্তা গড়ে উঠেছে সামাজিক অভিজ্ঞতার আলোকেই। তাই সামাজিক অভিজ্ঞতা অজ্ঞেয় নয়। কেননা, সমাজ বস্তুর প্রেক্ষাপটেই গড়ে উঠেছে সামাজিক অভিজ্ঞতা, কালক্রমে যা সঞ্চিত হচ্ছে মানুষের জ্ঞানের ভাণ্ডারে

মার্কসীয় মতবাদে বস্তুবাদী ব্যাখ্যার নিমিত্তে যে পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় তা হচ্ছে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে যে, কোন বস্তুর বিশ্লেষণ অন্য বস্তু থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে করা যায় না। কেননা, পৃথিবীর কোন বস্তুরই স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকতে পারে না

আবার বস্তু বা ঘটনাকে বিশ্লেষণের সময় তার গতি বা পরিবর্তনের প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। কেননা, প্রতিটি বস্তুই গতিশীল এবং প্রতিটি ঘটনারই উৎপত্তি এবং পরিণতি রয়েছে। আবার বস্তুর বিশ্লেষণের সময় বস্তুর গতির চরিত্র সম্বন্ধে ধারণার প্রয়োজন। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে, সকল বস্তুই সামনের দিকে, উন্নতির দিকে এগিয়ে যায় এবং গতি পশ্চাদমূখী নয়

মার্কস তাঁর অন্যতম সহযোগী বন্ধু আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতা কমরেড ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শন সমাজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন, ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ বিশ্লেষণের বস্তুবাদী পদ্ধতি ব্যাখ্যাকে বলা হয় ঐতিহাসিক বস্তুবাদ

ঐতিহাসিক জড়বাদঐতিহাসিক বস্তুবাদকার্ল মার্কসকার্ল মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদদ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ

 

 

ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য

written by TRI May 19, 2022

ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্র আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তাঁর `Essays in SociologyএবংThe Theory of Social and Economic Organizationগ্রন্থে আলোচনা করেছেন। তিনি কার্ল মার্কস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমলাতন্ত্রকে বর্তমানকালের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত করে ব্যাখ্যা দান করেছেন। তিনি আমলাতন্ত্রের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা বিশ্বের Ideal type of Bureaucracy নামে সুপরিচিত।

Max Weber এর মতে, Bureaucracy means a system of Govt. where department officially at upper levels have their voice heard and given due consideration.”

Max Weber তাঁর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ `Essays in Sociology‘-তে আমলাতন্ত্রের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা বলেছেন।

১। নিয়মকানুন

সকল দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে যা সাধারণভাবে আইন প্রশাসনিক বিধিবিধান দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।

২। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনটি এক সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি বেষ্টিত। সংগঠনের প্রতি সদস্যকে তাঁর নিজ নিজ ক্ষেত্রে কার্য সম্পাদন করতে হয়। তাদের কর্ম পরিধি আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।

৩। কর্মবিভাগ কর্ম বিশেষীকরণ

কর্মবিভাগ কর্মবিশেষীকরণের উপর আমলাতান্ত্রিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত। কোন কাজের একটি বিশেষ অংশ সম্পাদনের জন্য কর্মচারীদের মেধা   যোগ্যতার ভিত্তিতে বাছাই করা হয়।

পদক্রমনীতি

পদক্রমনীতি অনুসরণ করে চলে আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে উর্ধ্বতন অধস্তনদের মধ্যে সম্পর্ক বজায় থাকে। অধস্তন অফিসটি উর্ধ্বতন অফিসের অধীন থেকে কর্মসম্পাদন করে থাকে।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকরণের কারণ প্রভাব

৫। নিয়োগ নীতি

আমলাতান্ত্রিক সংগঠন নিয়োগ নীতির দ্বারা পরিচালিত। এতে কর্মচারীদের নির্বাচনের পরিবর্তে নিয়োগ করা হয়।

৬। বৃত্তিগত ব্যবস্থাপনা

কর্মচারীদের টেকনিক্যাল জ্ঞানের ভিত্তিতে আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কর্মচারীদের নিয়োগ করা হয় লিখিত পরীক্ষা বা টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেটের মাধ্যমে। কর্মচারীদের জ্ঞান পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবার এভাবে আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের ক্ষেত্রে বৃত্তিগত ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

৭। বিধিবিধান

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কার্য পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান থাকা অপরিহার্য। এতে সংগঠনের নীতিমালাসমূহ লিপিবদ্ধ থাকবে এবং সংগঠনে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন।

৮। বেতন ভাতা অন্যান্য সুবিধাদি

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কর্মচারীবৃন্দ তাদের বেতন ভাতাদি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। চাকরি থেকে অবসরকালে পেনশন ভোগ করেন। কর্মচারীদের পদক্রমে বেতন স্কেলের শ্রেণিবিন্যাস করা হয় এবং উক্ত পদের দায়িত্ব এবং কর্মচারীদের সামাজিক পদমর্যাদার উপর তাদের বেতন ভাতা নির্ভর করে।

৯। লিখিত বিধান

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের প্রশাসনিক কার্যসমূহ সিদ্ধান্ত এবং বিধিবিধান লিখিতভাবে রেকর্ড উপস্থাপিত হয়ে থাকে। এমনকি সে ক্ষেত্রে মৌখিক আলোচনা যুক্তিযুক্ত এবং একান্তভাবে কাম্য।

১০। প্রধান জীবিকা

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে অফিসকে কর্মচারীদের প্রধান জীবিকা বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ, নিজ অফিসকে জীবিকা হিসেবে সংগঠনের কর্মচারীরা গ্রহণ করে।

১১। স্বাধীনচেতা

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে প্রতিটি অফিস বা পদ একটি পারস্পরিক স্বাধীন চুক্তির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। স্বাধীন চুক্তির কারণে স্বাধীন নিয়োগ সম্ভব হয়। তবে কর্মচারীরা ব্যাক্তিগতভাবে স্বাধীন হলেও কর্মের জন্য তারা কর্তৃপক্ষের নিকট দায়ী থাকেন।

১২। পদমর্যাদা ভোগ ব্যবহার

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে কর্মচারীদের টেকনিক্যাল জ্ঞানের ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। লিখিত পরীক্ষা কিংবা টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেটের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়।

১৪। পদোন্নতি

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে কর্মচারীদের দক্ষতা, যোগ্য জ্যেষ্ঠত্ব নীতির উপর ভিত্তি করে পদোন্নতি প্রদান করা হয়।

১৫। সাংগঠনিক ক্রিয়াকলাপ

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে কর্মচারীদের পরিপূর্ণভাবে সংগঠনের উৎপাদন বা প্রশাসনিক হাতিয়ারের মালিকানা হতে পৃথক থাকতে হয়। সংগঠনের সম্পত্তি এবং কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মধ্যে পার্থক্য থাকবে।

১৬। অরাজনৈতিক নির্দলীয়

আমলাতন্ত্র অরাজনৈতিক নির্দলীয় সংগঠন হিসেবে কাজ করবে। রাজনৈতিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত না থেকে নিরপেক্ষভাবে নিয়ম মাফিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।

ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্রকে একটি সর্বজনীন ধারণা এবং সঠিক হিসেবে তুলে ধরেছেন। আন্তর্জাতিক সংগঠন ব্যবসায় বাণিজ্যিক সংগঠন, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা ধর্মীয় সংগঠন সকল ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র বিদ্যমান থাকে।

 

0 comment 0 

 

No comments:

Post a Comment

সামাজীক বিজ্ঞান ইউনিট ২।। ১৮তম NTRCA স্কুল পর্যায় লিখিত প্রস্তুতি।

  ভাষা আন্দোলন বলতে কি বুঝ ? ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর। ভূমিকা :  ‘ ভাষা আন্দোলন ’ বাঙালির মুক্তির সংগ্রামী...